Monday, December 23, 2024
Home ভারত অবৈধ খনি উত্তোলন যেভাবে ধ্বংস করছে ভারতের আরবিল্লি

অবৈধ খনি উত্তোলন যেভাবে ধ্বংস করছে ভারতের আরবিল্লি

by Hocchetaki
0 comment

ভারতের রাজস্থানে অবৈধ খনি উত্তোলনের কারণে প্রাচীন আরাবল্লী পর্বতমালা আজ অস্তিত্ত্বের সংকটে। যেখানে একসময় বিশাল বিশাল পাহাড় ছিল, তা এখন পাথুরে বর্জ্যভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খনি থেকে ভারত সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে ঠিকই, কিন্তু তা স্থানীয়দের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। খনিজ দূষণের কারণে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ নানা ধরনের মরণ ব্যাধি সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অবৈধ খনি বিরোধী আন্দোলনকারী / এক্টিভিস্ট কৈলাশ বলেন, “এই পর্বতমালা স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে চুপচাপ দেখে যাই, তাহলে আমরাও ধ্বংস হয়ে যাবো আর আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও ধ্বংস হয়ে যাবে।”

খনি কোম্পানির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৈলাশ চালিয়ে যাচ্ছেন এক অসম যুদ্ধ :

এক্টিভিস্ট কৈলাশ আর তার এক সঙ্গী রাতের অন্ধকারে অবৈধ খনি এলাকায় গোপনে প্রবেশ করে। তারা সেখানে দেখতে পায় রাতের অন্ধকারে খনি উত্তোলন অবিরত চলছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। মূলত অবৈধ উত্তলনের প্রমাণ খুজতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা খনি এলাকায় যায়। ইতিপূর্বে অবৈধ খনি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কৈলাশের উপরে বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও জীবনের ঝুকি নিয়ে তিনি আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ ধ্বংসের মুখে :

গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান আর দিল্লির কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা আরাবল্লি পর্বতমালার জীববৈচিত্র আজ হুমকির মুখে। অসংখ্য বন্য প্রাণী, কৃষি জমি আর হাজার হাজার মানুষের বাসস্থান ছিল এই পর্বতের কোল ঘেঁষে। কিন্তু অবৈধ খনি উত্তোলনের ফলে উর্বর কৃষি জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। আশেপাশের নদী নালার পানি বিষাক্ত রাসায়নিকে দূষিত হচ্ছে। দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত খনি উত্তোলনের ফলে হাজারো মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কৈলাশ বলেন কয়েকজন মানুষের উন্নতি ও বিলাসিতার বলি হচ্ছে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। খনি থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আর অর্থ দিয়ে কিছু জায়গায় উন্নয়ন হয়তো হচ্ছে, কিন্তু তার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি মানুষ তাদের জীবন হারাচ্ছে। মরণ ব্যাধি সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আমাদের এই আন্দোলন।

স্থানীয়রা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও নাগরিক সুবিধা :

রাজস্থানের এই জায়গাটি চিহ্নিত খড়া প্রবন একলা। অর্থাৎ এই এলাকার পানি শুধুমাত্র স্থানীয়দের ব্যবহার করার কথা।  কিন্তু যেখানে স্থানীয়রাই পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না, সেখানে খনি কোম্পানিগুলো প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার পানি অপচয় করছে। অন্যদিকে খনি উত্তোলনের জন্য সেখানে প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আশেপাশের মানুষের অভিযোগ এসব বিস্ফোরণের ফলে তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। যখন খনিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তখন স্থানীয়দের বাড়িঘর কেঁপে উঠে। অনেক বাড়ি এই বিস্ফোরণের কারণে বসবাসের সম্পূর্ণ উনুপযোগী হয়ে গেছে। স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত এসব মাইনিং কোম্পানি অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয়দের যাদের জমি খননের জন্য অধিকরণ করা হচ্ছে তাদের জমির প্রাপ্য মূল্য দেয়া হচ্ছে না। অনেকেই তাদের প্রাপ্য অর্থ আদায়ের জন্য খনি কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে।

স্থানীয়দের গড় আয়ু উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে :

স্থানীয়দের একজন বলেন যে এখনকার পরিবেশ এখন অন্তত খারাপ। এখানে মানুষ এখন ৬০ বছরও বেঁচে থাকতে পারে না। তারও অনেক আগেই সবাই মারা যায়। গ্রামে হাজারো মানুষ এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এতো ক্যান্সার কোথা থেকে এসেছে? ২৪ ঘণ্টাই মানুষ নিশ্বাসের সাথে দূষিত ধূলাবালি টেনে নিচ্ছে। 

আশেপাশের পরিবেশ যেনো একধরণের Slow-Poison :

উত্তোলনকৃত খনিজ পদার্থের দূষণের কারণে এই এলাকার বায়ু এখন একধরণের slow-poison এ পরিনত হয়েছে। আশেপাশের এলাকার প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মানুষ মরণঘাতী সিলিকোসিসে আক্রান্ত। এখনকার প্রায় সবাই আ্যজমা নয়তো সিলিকোসিস আক্রান্ত। অথচ খনি উত্তোলন শুরু হওয়ার আগে স্থানীয়দের কেউ স্লিকোসিস রোগের কথা জানতই না। আর এখন ঘরে ঘরে মানুষ সিলিকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছে। নিয়ম অনুসারে সিলিকোসিসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা খরচ সরকারের বহন করার কথা। কিন্তু কেউই সে সুবিধা ভোগ করছে না। অনেকেই তাদের সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে চিকিৎসার অর্থ যোগাড় করছে। শুধুমাত্র মানুষই নয়,  স্থানীয়দের গৃহপালিত পশু-পাখিও অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। আশেপাশের জমিতে এখন আর কোন ফসল ফলে না। সামান্য যেসব ফসল জন্মেও দূষণের কারণে তার অবস্থা এখন এমন যে তা যদি কেউ খায় সে নিশ্চিতভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন প্রতিদিনের সাধারণ ঘটনা :

খনির মালামাল বহনকারী ট্রাকসমূহ স্থানীয়দের কাছে এক মূর্তিমান আতংকের নাম। এসব ট্রাক সবসময় অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করে মালামাল পরিবহন করে। বায়ু দূষণ ও ধুলাবালির কারণে রাস্তাঘাটে দৃষ্টিসীমা খুবই কম থাকে। কয়েক মিটার সামনেও ঠিকমতো দেখা যায় না। যার ফলে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এমনকি বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও এসব ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্টে মারা গেছে। তবুও থেমে নেই অতিরিক্ত পণ্য বহন করে মালামাল পরিবহন করা।

হাজারো বাধার পরে তবুও থেমে নেই প্রতিবাদ :

কৈলাশ ও তার সহযোগীরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অবৈধ উত্তোলনের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি। তবুও তারা থেমে থাকবে না। সর্বশেষ ইন্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট আদেশ জারি করেছে যে আরাভাল্লি পর্বতমালায় কোর্টের আদেশ ছাড়া কোন ধরনের নতুন খনন কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। এখন এই আদেশের বাস্তবায়ন হবে কিনা আর এই প্রাচীন আরাবাল্লি পর্বতমালা তার ঐতিহ্য নিয়ে মাথা উচু করে টিকে থাকতে পারবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। 

Source: Al Jazeera https://youtu.be/MNbxUpFhKgY?si=OFyzb4mYHaesFtgj

You may also like

Leave a Comment

হচ্ছেটা কী? একটি নিউজ ওয়েবসাইট এখানে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় সকল আপডেট নিউজগুলো নিয়মিত পাবলিশ করা হয় |

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর

হচ্ছেটাকী?
হচ্ছেটাকী?