মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে সাময়িক স্বস্তি পেলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাজ্যের একটি আদালত মঙ্গলবার রায় দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস প্রদান করতে ব্যর্থ হলে অ্যাসাঞ্জ তাঁর প্রত্যর্পণ বিরোধী আপিলের সুযোগ পাবেন।
অ্যাসাঞ্জকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের চেষ্টা করা হচ্ছে। মার্কিন নথি ফাঁস করে দেওয়ায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। আপিলের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে তাঁকে কয়েকদিনের মধ্যেই প্রত্যর্পণ করা হতো। কিন্তু আদালতের এই রায় প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে আপাতত বিলম্বিত করেছে। তবে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত অ্যাসাঞ্জের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবি জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসাঞ্জের বিচার হলে তাঁর ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এছাড়াও অ্যাসাঞ্জ যেহেতু মার্কিন নাগরিক নন, সেইক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী তাঁর উপর প্রযোজ্য হবে না।
গত মাসে অনুষ্ঠিত একটি দুই দিনের শুনানিতে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার হলে “ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত অস্বীকার” হবে। মার্কিন বিচার ব্যবস্থায় তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না। হাজার হাজার নথি ও কূটনৈতিক তথ্য প্রকাশের ফলে যুদ্ধাপরাধ, অত্যাচার এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বলে তাঁর আইনজীবীরা উল্লেখ করেন।
যুক্তরাজ্যের আদালত ২০শে মে আরেকটি শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন। আদালত যে কারণগুলিতে তিন সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চেয়েছে সেগুলি হল – অ্যাসাঞ্জ মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বর্ণিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর নির্ভর করতে পারবেন, তাঁর বিচারে জাতীয়তার কারণে কোনও পক্ষপাতিত্ব করা হবে না এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না।
২০১০ সালে অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস হুইসেলব্লোয়ারের মাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়া হাজার হাজার নথি প্রকাশ করেছিল চেলসি ম্যানিং থেকে। এই নথিগুলিতে দাবি করা হয়েছিল মার্কিন সরকার ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দাবি এই নথিগুলি বেআইনিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং সেগুলো প্রকাশের ফলে মার্কিন সরকারের জন্য তথ্য সংগ্রহকারীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে।
গত পাঁচ বছর ধরে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে বন্দী হিসেবে রয়েছেন। এর আগে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা আদালতের সিদ্ধান্তকে আশ্চর্যজনক বলে বর্ণনা করেছেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনকে এই মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আদালতের সাম্প্রতিক রায়ের পরে, এখন প্রশ্ন হল কীভাবে এই আইনি লড়াই এগিয়ে যাবে। আসানজের আইনজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। তারা এটাও যুক্তি দিতে পারেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর কারাগারের সব অবস্থার মধ্যে তাকে রাখা হবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই আইনি লড়াই দীর্ঘ সময়ব্যাপী ধরে চলতে পারে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।
Source: https://www.youtube.com/