ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে চলা মামলায় নিজেদের মত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত-আইসিজে। শুক্রবার আদালত ইসরায়েলকে রাফাহ শহরে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক জনগণের ধ্বংসের ঝুঁকি তৈরি করে, এমন সামরিক অভিযান বন্ধ করতে আদেশ দিয়েছে।
উপস্থিত ১৫জন বিচারকের মধ্যে ১৩জনই এই আদেশের পক্ষে নিজেদের ভোট দিয়েছেন। বাকি দুই বিচারক জানিয়েছেন ভিন্নমত। বিরোধীতা করা বিচারক উগান্ডার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জুলিয়া সেবুতিন্ডে এবং ইজরায়েলের অ্যাডহক বিচারপতি আহারন বারাকের মতে, আদালত ইসরায়েলকে রাফাহ অভিযান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার জন্য কোনো আদেশ দেয়নি। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যেন জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন না হয়, সেই ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে শুধু।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারক ডায়ার ত্লাদি দাবি করেছেন, আদালত স্পষ্টভাবে ইসরায়েলকে রাফাহ আক্রমণ বন্ধ করতে আদেশ দিয়েছে।
অনেকেই আইসিজের এই সিদ্ধান্তকে সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা হিসাবে দেখছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার বেশ কিছু শর্ত ছিল যা ইসরায়েলকে রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়, যদি এটি নিশ্চিত করা যায় সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা কোন ঝুঁকির সম্মুখীন হবে না।
তবে শুক্রবারের রায়ে ফিলিস্তিনের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইসিজে। সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশের পাশাপাশি, ইসরায়েলকে মিশরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খোলা রাখতে আদেশ দিয়েছে আদালত, যেন সেখানে অবাধে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে পারে। রাফাহ ক্রসিংয়ের ব্যাপারে ইসরায়েল মিশরকে দোষারোপ করে অভিযোগ করে, মিশরের কর্তৃপক্ষ রাফাহ ক্রসিংয়ে কার্যক্রম চালাতে তাদের সহযোগিতা করছে না।
একইসাথে আইসিজের তদন্ত কমিটি ও অন্যান্য স্বাধীন তদন্ত কমিটিকে গণহত্যার তদন্ত করতে গাজায় অবাধ প্রবেশের অনুমতি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আদেশগুলি বাস্তবায়নের বিষয়ে ইসরায়েলকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। যদি ইসরায়েল কোনো আদেশ লঙ্ঘন করে, তাহলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আইসিজের রায়ের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাকি মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির আইসিজের রায়কে “ইহুদি বিরোধী আদালতের অপ্রাসঙ্গিক আদেশ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন যুদ্ধ মন্ত্রিসভার মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজও।