মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশ করতে চায় ভারত। আর সে লক্ষ্যে এবার একটি মুসলিম দেশকে টার্গেট করেছে তারা। ওমানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তেল বাণিজ্যে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। দেশটির সঙ্গে লোভনীয় বাণিজ্য চুক্তি করে তবেই হরমুজ প্রণালীর টিকিট পাচ্ছে ভারত।
এই চুক্তি কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকেই লাভজনক না, ভারতের কৌশলগত দিক এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ওমানের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের একটি কৌশলগত জায়গায়। জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ওমানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, এই চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যে ভারতের অংশ্রগণ আশা করা হচ্ছে!
যদিও, ভারত ও ওমানের মধ্যে বর্তমান বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কম। তবে, ওমানের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই দেশটি ভারতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওমানের অবস্থান হরমুজ সাগরের কাছে, যা বিশ্বের জাহাজ চলাচলের একটি প্রধান পথ। যেটি কে মূলত মূল টার্গেট বানিয়েছে ভারত।
এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিও এই চুক্তিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের পাশাপাশি ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধ জাহাজ চলাচলের পথগুলিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এই অস্থির পরিস্থিতিতে ওমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ভারতের পক্ষে কৌশলগতভাবে লাভজনক।
উল্লেখ্য, ভারত সরকার গত কয়েক বছরে পারস্য উপসাগরের দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা চালিয়েছে। কারণ, পারস্য উপসাগরের দেশগুলির সঙ্গে একত্রে গঠিত জি.সি.সি. বা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে ভারত এখনও সফল হয়নি।
এই চুক্তির ফলে ভারত ওমানের কাছ থেকে কৃষিপণ্য, রত্ন ও গয়না, চামড়া, যানবাহন, চিকিৎসা সরঞ্জাম, মেশিন তৈরির যন্ত্রপাতি এবং কাপড় -এর মতো ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো পণ্য আমদানি করতে পারবে শুল্ক ছাড়েই।
অন্যদিকে, ভারত ওমানের কিছু পেট্রোকেমিক্যাল, অ্যালুমিনিয়াম এবং তামারের ওপর শুল্ক কমাবে। তবে, এই ধরনের পণ্যের আমদানি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
নির্বাচনের ফলাফল ৪ঠা জুন ঘোষণা হবে, সেই নির্বাচনে জয়ী সরকারের অনুমোদন লাভের পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আবারও নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি, ফলে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে যাওয়ারই কথা।
মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের এখন রমরমা অবস্থা। দেশটি ইতিহাসের আর কোনো সময়ই মধ্যপ্রাচ্যে এত সাফল্য পায়নি। সম্পূর্ণ বিপরীত শিবিরে থাকা ইসরাইল, ইরান ও উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব প্রধান শক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে দেশটি এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক উত্থান-পতন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে মেরুকরণ বাড়তে থাকায় ভারতের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাতে বড় ধরনের জটিলতায় পড়তে পারে ভারত।
ভারত ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নানামুখী কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৯০-৯১ সময়কালে কুয়েতে ইরাকি অভিযানের পর মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতি ও কূটনৈতিক বিব্রতকর অবস্থার পর এবং এরপর শুরু হওয়া উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারত সিদ্ধান্ত নেয়, ইরাকের ওপর থেকে নির্ভরতা হ্রাস করতে এবং ওই অঞ্চলে বৃহত্তর অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করতে।
সে অনুযায়ী তারা ১৯৯১ সালে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, ১৯৯০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি ও মোহাম্মদ খাতেমির সময় ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের পর উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করে।
Source: https://www.dawn.com/news/1829967/india-set-to-sign-trade-deal-with-oman-to-expand-its-middle-east-ties