গাজা জুড়ে দীর্ঘ ৬মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশটিকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। এবার তারই প্রতিবাদে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ, দ্রুত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন, গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পাশাপাশি ইসরায়েল ভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথেও চুক্তি বাতিলের দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের নেমেছে অনেক রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনও।
মার্কিন হাউসের স্পিকার জনসন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। ইহুদি ছাত্রদের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের জন্য নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় জনসন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মৌলবাদের পক্ষে আন্দোলনকারী বলে মন্তব্য করেন।
ধরপাকড় চালানো হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের উপরেও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা পুলিশের এধরনের আচরণের বিরোধীতা করে স্লোগান শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের অধ্যাপক জোডি আর্মার বলেছেন, “গণহত্যার বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিবাদকে নীরব করার জন্য ইহুদি বিরোধীতাকে অস্ত্র করা উচিত নয়। গাজায় ইসরায়েলের হত্যার বিরোধিতা করার অর্থ এই নয় যে আপনি ইহুদি বিরোধী।”
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেরেমি সুরি দাবি করেন ফিলিস্তিনিপন্থী ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। সুরি বলেন, “শিক্ষার্থীরা “স্বাধীন ফিলিস্তিন” বলে স্লোগান দিচ্ছিলো। তারা ইহুদি বিরোধী বা হুমকি প্রদানের মতো কিছুই বলছিল না। তারা হুমকির মতো কিছু বলেননি। রাজ্য পুলিশ, ক্যাম্পাস পুলিশ, সিটি পুলিশ কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই ছাত্রদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে।”
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট বলেছেন গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের কারাগাররে পাঠানো উচিত। অ্যাবট দাবি করেছেন যে বিক্ষোভকারীরা ইহুদি-বিরোধীতায় জড়িত ছিল, যদিও তার অভিযোগের কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেননি। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) বিক্ষোভের প্রতি অ্যাবটের প্রতিক্রিয়াকে “অসাংবিধানিক” বলে বর্ণনা করেছে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইয়েল, এমআইটি, ইউসি বার্কলে, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রাউন সহ আরও কয়েকটি স্কুলে বিক্ষোভ শুরু করেছে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ সীমিত করে এবং কোনো আয়োজনের পূর্বে অনুমতি নিতে হবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশনা জারি করেছিল যেন শিক্ষার্থীরা বড় আকারের বিক্ষোভ না করতে পারে। স্থগিতাদেশ জারি হয় হার্ভার্ড আন্ডারগ্রাজুয়েট প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটির উপরেও। তারপরেও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু সহ একটি বিক্ষোভ শিবির স্থাপন করে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ থেকে লাভবান হওয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থী তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের সাথে বিনিয়োগ এবং অংশীদারিত্ব বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে সাম্প্রতিক এক গণভোটে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন গাজায় চলমান যুদ্ধকে সমর্থনকারী সংস্থাগুলি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচ্ছিন্ন হওয়া উচিত। এর মধ্যে নাম এসেছে বিএই সিস্টেম, বোয়িং, এলবিট সিস্টেম এবং লকহিড মার্টিন সহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির।
অস্ট্রেলিয়ায় মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা সংহতি ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা একটি বিবৃতি জারি করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বিএই সিস্টেম, বোয়িং এবং লকহিড মার্টিন সহ সংস্থাগুলির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে।
https://www.trtworld.com/us-and-canada/student-spring-texas-students-face-police-violence-in-pro-palestine-rally-17907811https://www.trtworld.com/us-and-canada/gop-leader-threatens-to-use-national-guard-against-student-spring-protests-17910170