( Description: নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের অভিযোগে, পাকিস্তানের কোম্পানিগুলোকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার মতো পরিণতি ঘটতে পারে।)
৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি। এই সফরে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক মেরামত প্রাধান্য থাকলেও আলোচনায় এখন বাণিজ্য। ইরানের ১০ বিলিয়ন বাণিজ্যের লোভনীয় প্রস্তাবে খুশি হলেও একই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে শঙ্কার মেঘ। একদিকে পাকিস্তানের অর্থনীতি সচল করার সুযোগ, অন্যদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়ার আশঙ্কা। সব মিলিয়েই চলছে উভয় সংকট সমাধানের বিশ্লেষণ।
বর্তমানে, পাকিস্তানের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হল ইরানের সঙ্গে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করা। ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সুবিধা দেবে , অপরদিকে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ বিবেচনা করার কথা বলছেন দেশটির বিশ্লেষকরা।
ইরান প্রস্তাব দিলেও, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের চুক্তি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। কেননা, নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের অভিযোগে, পাকিস্তানের কোম্পানিগুলোকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার মতো পরিণতি ঘটতে পারে।
বিপরীতভাবে, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কিছু সম্ভাবনাময় দিকও রয়েছে। ইরান প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের মতো জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ। পাকিস্তান এই জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে পারবে। এছাড়াও, ইরানের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি এবং শিল্প খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরানোর সুযোগ রয়েছে।
তাছাড়া, ইরানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার কিছু সম্ভাব্য সুবিধাও রয়েছে। ইরানের সাথে বাণিজ্য পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, ইরান পাকিস্তানের একটি বড় তেল আমদানিকারক। ইরানের সাথে বাণিজ্য বন্ধ করলে পাকিস্তানকে বিকল্প উৎস থেকে তেল আমদানি করতে হবে, যা অধিক মূল্যে পড়তে পারে।
এছাড়াও, ইরানের সাথে বাণিজ্য পাকিস্তানের অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। পাকিস্তান ও ইরান উভয় দেশই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সহজ হয়।
পাকিস্তানের জন্য সিদ্ধান্তটি কঠিন। দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু ইরানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কেরও মূল্য রয়েছে। পাকিস্তানকে এমন একটি কৌশল নিয়ে আসতে হবে যা তাদের উভয় পক্ষের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম করে।
তাই সুযোগ এবং শঙ্কার মাঝামাঝি এসে পাকিস্তানের নীতি নির্ধারকদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, অপরদিকে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সুযোগগুলোও উপেক্ষা করা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের উচিত হবে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে এমন একটা ব্যবস্থা করতে পারে যেখানে ইরানের সঙ্গে সীমিত বাণিজ্য পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হবে।