কয়েকদিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ ক্যাম্পাসের বিক্ষোভকর্মসূচীতে দেশের নেতাদের ইসরায়েলের পক্ষ ত্যাগের আহ্ববান জানাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ কর্মসূচী শুরুর পর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে ছাত্র ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গাজা সংহতি আন্দোলন এখন ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস এবং অন্যান্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরে এবার বিক্ষোভ ফ্রান্স থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ছাত্ররা গাজার সমর্থনে বিক্ষোভ করছে।
ফ্রান্সের প্যারিসে সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। এছাড়াও বিখ্যাত প্যারিস ইন্সটিটিউট অফ পলিটিক্যাল স্টাডিজের প্যালেস্টাইন কমিটি একটি বিক্ষোভের আয়োজন করছে যেখানে শিক্ষার্থীরা বুধবার প্রায় ১০টি তাঁবু স্থাপন করে আন্দোলন শুরু করেছে। পুলিশি অভিযান সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা আবার জড়ো হয় আন্দোলনে।
অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মঙ্গলবার প্যালেস্টাইন-পন্থী ক্যাম্প স্থাপন করে এবং গতকাল শুক্রবারও তাদের বিক্ষোভ চালিয়েছে। এছাড়াও, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার তাদের মূল ক্যাম্পাসের দক্ষিণে তাঁবু ফেলে অবস্থান আন্দোলন শুরু করেছে।
ইতালির রোমে স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ফিলিস্তিনের পক্ষে ১৭ ও ১৮ এপ্রিল অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল।
১৯ এপ্রিল রাত থেকে, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারউইকের একটি গ্রুপ ওয়ারউইক স্ট্যান্ডস উইথ প্যালেস্টাইনের সদস্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ দখল করে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়াও সোমবার লিচেস্টারে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয় যাতে লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালেস্টাইন সোসাইটির শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। গত মাসে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততার প্রতিবাদে একটি ক্যাম্পাস ভবন দখল করে।
কী বলছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা?
প্যারিস ইনস্টিটিউট অফ পলিটিক্যাল স্টাডিজ সায়েন্সেস পো-তে প্রতিবাদকারী ছাত্র হিচাম আল জাজিরাকে বলেছেন, “আমাদের কয়েকটি দাবি রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল সায়েন্সেস পো ইসরায়েলের সাথে তাদের একাডেমিক ও আর্থিক যেসব সম্পর্ক রয়েছে তার তদন্ত শুরু করবে।” আয়োজকরাও চায় সায়েন্সেস পো ইজরায়েলের কর্মকাণ্ডের জন্য নিন্দা জানাক।
ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার জন্য ফরাসী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরবোনের শিক্ষার্থীরা।
ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দাবি জানিয়েছে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গাজায় গণহত্যা চালাতে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থায়নের অভিযোগ এসেছে সেসকল চিহ্নিত কোম্পানিগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আন্দোলন করছে ওয়ারউইকের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার লিচেস্টারে এলবিট সিস্টেম ইউকে ড্রোন কারখানার বাইরে কারখানাটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
ফ্রান্সে কেমন চলছে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ?
এএফপি জানিয়েছে বুধবার ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে সায়েন্সেস পো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ভেঙে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার থেকে আল জাজিরার একটি ভিডিওতে দেখা যায় সোরবোনের শিক্ষার্থীদের ঘিরে রেখেছে দেশটির দাঙ্গা পুলিশ।