সোমবার দিনে-দুপুরে কিয়েভের প্রধান শিশু হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৩৬ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে রুশ বাহিনী। সেই সাথে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে দীর্ঘ কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বিমান হামলার নজির স্থাপন করেছে তারা।
ঘটনার পর হাসপাতালের বাইরে রাস্তায় শিশুদের কোলে নিয়ে হতবিহ্বল ও কাঁদতে থাকা অভিভাবকদের দেখা যায়। সরকার মঙ্গলবারকে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ বিমান হামলার একটি হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে সোমবারের এই হামলাকে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, ৩৮টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৩০টি ভূপাতিত করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জানিয়েছেন কিয়েভ, ক্রিভি রিহ ও দিনিপ্রোসহ পূর্বের দুই শহরে ৫০টি বেসামরিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রয়টার্স প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র শিশু হাসপাতালের দিকে আকাশ থেকে পড়ছে এবং তারপরেই একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে। ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সজ্জিত শিশু হাসপাতালের পাঁচটি ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ হামলায়।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা ক্ষেপণাস্ত্রটিকে কে.এইচ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে শনাক্ত করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিয়েভের ভলিতে ২ শিশুসহ ২২ জন নিহত হয়। সেইসাথে ৮২ জন আহত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে ১১ জন নিহত এবং ৬৪ জন আহত হয়েছে বলে আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রাদেশিক গভর্নর বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর পোক্রভস্কে একটি শিল্প স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন প্রতিশোধ নেবে। কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের কাছে হামলার বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।।
পোল্যান্ড সফররত জেলেনস্কি পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সঙ্গে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা এই মানুষদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেব, আমরা অবশ্যই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাব।”
কূটনীতিকরা বলেছেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইকুয়েডর, স্লোভেনিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মঙ্গলবার বৈঠক করবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনে প্রতিরক্ষা শিল্প কারখানায় এবং বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রুশ বাহিনীর আক্রমণে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। তবুও মস্কো বারবার বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খানের সঙ্গে এই হামলার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেছেন, ইউক্রেনের এখনও পর্যাপ্ত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। নিয়মিত রুশ বিমান হামলা থেকে তার শহর এবং অবকাঠামো রক্ষার জন্য, কিয়েভের মিত্রদের দ্রুত আরও প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।