Table of Contents
গতকাল সোমবার হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এক বিবৃতিতে মিশর ও কাতারের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। তারপরেই উল্লাসে জয়োধ্বনি শুরু হয় গাজা ও রাফাহ-এর রাস্তায়। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাস্তায় এসে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করতে থাকে।
কিন্তু এখনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি ইসরায়েল। উল্টো রাফাহতে সামরিক অভিযানের জন্য সেখানকার শরণার্থীদের নিরাপদস্থানে সরে যেতে সময় বেধে দিয়েছে দেশটি।
যুদ্ধবিরতিতে হামাসের প্রস্তাব
৩ ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাস সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পক্ষে সায় দিয়েছে। প্রতিটি ধাপের সময়সূচী হবে ৬ সপ্তাহ।
প্রথম পর্যায়ে, হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে বৈরিতা সাময়িকভাবে বন্ধ হবে এবং সেইসাথে গাজার অধিক জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। বন্ধ থাকবে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানও। তারপর ধীরে ধীরে শুরু হবে বন্দী বিনিময়, যেখানে প্রতি ইসরায়েলি বন্দীর বিনিময়ে ৩০জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।
এছাড়াও প্রস্তাবে গাজায় বাস্তুচ্যুত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের সুযোগ দিতে হবে এবং মানবিক ও ত্রাণ সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ দিতে হবে বলে আহ্ববান জানিয়েছে হামাস।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে সামরিক অভিযানের স্থায়ী সমাপ্তি করে গাজা থেকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে গাজার জন্য একটি তিন থেকে পাঁচ বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা করে ইসরায়েলের সাথে সামরিক বিরোধের অবসান করা হবে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন গাভির তাৎক্ষণিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে রাফাহ আক্রমণের আহ্বান জানান।
রয়টার্সের সাথে কথা বলা এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, “হামাসের ঘোষণাটি ‘ইসরায়েলকে একটি চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী’ পক্ষের মতো দেখাতে চালাকি বলে মনে হচ্ছে। যদিও কূটনীতিকরা পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় শুরু করতে মঙ্গলবার কায়রোতে ভ্রমণ করবে।”
জেরুজালেম বলছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের কাছ থেকে আসা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তাদের দাবি পূরণ করেনি। মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সৈন্যদের দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের দিকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে তারা পূর্ব রাফাতে হামাসের বিরুদ্ধে “টার্গেটেড স্ট্রাইক” পরিচালনা করতে বদ্ধ পরিকর।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের সর্বশেষ প্রস্তাবটি ইসরায়েলের প্রয়োজনীয় দাবিগুলো পূরণ করা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। দেশটির যুদ্ধ মন্ত্রিসভা হামাসের উপর সামরিক চাপ প্রয়োগ করার জন্য রাফাতে একটি আইডিএফ অপারেশন এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসরায়েলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সোমবার দ্য টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছেন, “ইসরায়েল যুদ্ধে তাদের লক্ষ্য অর্জন করবে।”
একই সময়ে, জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা সোমবার রাতে তেল আবিব এবং জেরুজালেমে রাস্তায় নেমে যুদ্ধবিরতির জন্য সমাবেশ করেছে। তারা দাবি করছে ইসরায়েলের এখন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহন করে বন্দীদের ফিরিয়ে আনা উচিত।
পুলিশ বাহিনী তেল আবিবের আয়লন হাইওয়েতে ট্রাফিক অবরোধকারী শত শত বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করে গ্রেফতারও করেছে। এছাড়া দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রবেশদ্বারের বাইরে বিগিন রোডও অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
কি বলছেন ফিলিস্তিনিরা
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের সম্মতির পরে গাজা জুড়ে ফিলিস্তিনিরা অবিলম্বে রাস্তায় উদযাপন করতে নামে। সবাই আশা করছে এই চুক্তি একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবে, যেখানে পুরো গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে, যেখানে মৃত্যু বেশিরভাগ পরিবারকে রেহাই দেয়নি।
তবে এখনো অনেক স্থানে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে আইডিএফ। ফলে গাজাবাসীরা এখনো শংকিত এই চুক্তিতে ঠিক কতটা সমর্থন জানাবে ইসরায়েল।
আইডিএফ-এর রাফাহ অভিযান
ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গাজা জুড়ে পৃথক বিমান হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী সন্ধ্যায় দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলে লক্ষ্যবস্তু করে তাদের কার্পেট বোমা হামলা চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত রাফাহতে তিনটি পৃথক হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এবং আর্টিলারি পূর্ব রাফাতে তাদের গোলাবর্ষণকে তীব্র করেছে। সেই সাথে শহরটির পূর্বাঞ্চলে কয়েক ডজন ড্রোন উড়িয়েছে আইডিএফ। গাজা স্ট্রিপের সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত রাফাহ শহরের পূর্ব সীমান্তের দিকেও ইসরায়েলি সামরিক যানবাহন অগ্রসর হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি
হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের মার্কিন কর্মকর্তাদের সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকরা হামাসের চুক্তির স্বীকৃতি সম্পর্কে বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এবং হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি কোনো বিশদ বিবরণ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মিলার বলেছেন, ওয়াশিংটন সম্পূর্ণভাবে পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত এসম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবে না।
হামাস মার্কিন-অনুমোদিত প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে নাকি প্রস্তাবের ভিন্ন সংস্করণে সম্মত হয়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানান মিলার।
এদিকে, কিরবি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে হামাসের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। বাইডেন এখনই এমন কিছু বলতে চান না যা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে নষ্ট করতে পারে।