Monday, December 23, 2024
Home আন্তর্জাতিক ইউরোপ, আমেরিকার শিক্ষার্থীদের ইসরায়েল বিরোধী আন্দোলন

ইউরোপ, আমেরিকার শিক্ষার্থীদের ইসরায়েল বিরোধী আন্দোলন

by Md Nayem
0 comment

পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক দমন-পীড়নের মধ্যেও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের জের ধরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, এই আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়েছে ইউরোপের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও।

আমেরিকাঃ
সারা দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের চলমান এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও শুরুর দিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিবেচনায় সে আন্দোলনে আপত্তি জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় এমন ফিলিস্তিন-পন্থী তরুণ বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রতি একাত্মতা দেখিয়ে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির গেটের বাইরে জড়ো হয়। এদিকে আন্দোলন শুরুর পর থেকে নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে আসা বন্ধ করে দেয় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ইহুদি শিক্ষার্থীদের একাংশ তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ জানানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলন শেষ করার নির্দেশ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। পরবর্তীতে সোমবার পুলিশ এসে ক্যাম্পাস থেকে অস্থায়ী তাঁবুগুলো সরানো শুরু করলে পুলিশের সঙ্গেও হাতাহাতিতে জড়ান শিক্ষার্থীরা। সে সময় বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। নিউইয়র্ক সিটির ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ বন্ধের নির্দেশনা না মানায়, তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বহিষ্কার সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে বোস্টনের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের তাঁবু উচ্ছেদ করে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।
চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরেই ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করে। ক্যাম্পাসের আইভি লিগ স্কুলের সামনে যেখানে এই পতাকা উত্তোলন করা হয় সেই জায়গাটি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার জন্য সংরক্ষিত।
দাঙ্গা পুলিশ সোমবার নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ডাউনটাউন ম্যানহাটনে ১শ’ ৫০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করেছে।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে পশ্চিমে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সারা দেশে একই ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বার্কলে এবং ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের কারণে গেল বুধবার শেষের দিকে তার গেটগুলি বন্ধ করে দিয়েছে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে কমপক্ষে ৪৭ জন প্যালেস্টাইনপন্থী বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের সাথে যুক্ত যেকোন আর্থিক স্বার্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানায়।
বুধবার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্তত চার ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি অফ প্রোভিডেন্স বুধবার তাদের বার্তায় ঘোষণা দেয় যে, ৯০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ক্যাম্প করে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের অংশগ্রহনকারী মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি ছাত্র অ্যালেক্স (ছদ্মনাম) জানায়, ‘এটি সংহতির বহিঃপ্রকাশ। সারা দেশে আমাদের কলেজগুলি একযোগে পদক্ষেপ নিচ্ছে, কারণ আমরা একসাথে কাজ করি। এটি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে একটি সম্মিলিত আন্দোলন।
এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউজ শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীদেরকে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, মুক্ত মত ও আলোচনাকে সমর্থন করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বিক্ষোভ দমনে মার্কিন প্রশাসনের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। আরও কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান তার।

ইউরোপঃ
আন্দোলনের স্রোত আমেরিকা পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার লন্ডন ও কভেন্ট্রিতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ব্রিটিশ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ইহুদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান তাদের।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেন্ট্রাল লন্ডনের গাওয়ার স্ট্রিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা ভিড় করে। এ সময় তাদের হাতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ‘অ্যাকশন ফর প্যালেস্টাইন’ গ্রুপ বিক্ষোভের আয়োজন করে। এ ছাড়া শুক্রবার ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন – ইউজিসির শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের মতো ক্যাম্পাসের কক্ষ দখল করে ৩৪ দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রায় সবাই আমাদের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে। যেভাবে আমাদের আন্দোলন দানা বাঁধছে তাতে আমরা সবাই খুব উৎফুল্ল।”

অস্ট্রেলিয়াঃ
অস্ট্রেলিয়াতে এই প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।
অ্যাডিলেডের শিক্ষার্থীরাও আজ পার্লামেন্ট ভবনে বিক্ষোভ করেছে। আগামীকাল সিডনি, ওলংগং ও বায়রন বে’র শিক্ষার্থীরাও সড়কে নেমে প্রতিবাদ জানাবে।
গত বৃহস্পতিবার, মেলবোর্নের শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবারের সময় স্কুল ছেড়ে বের হয়ে আসে। তারা সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখে ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। এই সমাবেশের অন্যতম আয়োজক আইভি জানান, ‘এই যুদ্ধ অন্যায্য। এটি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পরিচালিত নৃশংসতার অধ্যায়ে সর্বশেষ সহযোজন।’
এছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই সাধারণ জনগণ এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান রয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

You may also like

Leave a Comment

হচ্ছেটা কী? একটি নিউজ ওয়েবসাইট এখানে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় সকল আপডেট নিউজগুলো নিয়মিত পাবলিশ করা হয় |

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর

হচ্ছেটাকী?
হচ্ছেটাকী?